যাত্রা ২ 🔐🔐
শুধু আমি জানি , তোমাকে পাওয়ার আকুলতা পাহাড়ে জমাট বাধা অভিমানের থেকেও
কষ্টসাধ্য। তোমাকে ছোবার আগ্রহ আমার কোনদিনই ছিল না। তবুও বার বার কেন তোমার
কাছে আসতে ইচ্ছে করে।
মানুষের একান্ত এক স্বপ্ন থাকে। যা সে কখনও নিজের করতে পারে না। তুমি আমার সেই
আকাক্ষা। যাকে পাওয়ার সামর্থ আমার নেই।
সেদিন দুপুরে আনমনে হাঁটছিলাম । কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। দুচোখ আর দু-পা
যেদিক নিয়ে যাচ্ছিল আমি না চাইতেও সে দিকেই যাচ্ছি।
হঠাৎ ট্রেনের হর্ণ শোনা যাচ্ছে। বুঝলাম পাশেই ট্রেন স্টেশন আছে।এবার ওদিকেই আগাচ্ছি
স্টেশনে মেইল আর লোকাল ট্রেন হর্ণ দিচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনই ছাড়বে। ভাবছি ট্রেনে উঠে
ট্রেনের সাথে ট্রেন যাত্রার সঙ্গী হব। কাছে টাকা নেই। মেইল ট্রেনে উঠতে দেবে না।কোন
ভাবে উঠলেও TTR ধরতে পারলে জরিমানা করবে। তখন জরিমানা না দিতে পারলে পরের
স্টেশনে নামিয়ে দেবে।তাই লোকালে উঠে বসলাম। টিকিটের ঝামেলা নাই। সিটেরও তেমন
ঝামেলা নেই।যেখানে খুশি বসতে পারব। লোকালে উঠতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। জানালার
পাশের গদিতে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। দূর গ্রামের দৃশ্য গুলো দেখতে বেশ ভাল
লাগছে। মনে হচ্ছে আকাশ তার অভিমানী মানসিকতা ছেড়ে মাটির সাথে এক
নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সাথে কুয়াশার চাদরে সব কিছুকে ঢেকে রেখেছে। বেশ
মনোরম। এভাবে কয়েক ঘন্টা কেটে গেল। ঠিক বলতে পারবো না কতটা সময়। হাতে ঘড়িও
নেই।তাই সময়ের ঠিক গণনা করতে পারি নি। ট্রেন থেমে গেছে। সবাই দেখি নেমে যাচ্ছে।
দেখে বুঝলাম স্টেশন শেষ। এর আগে ট্রেন আর যাবে না। নামলাম।
অচেনা শহর, প্রতিটি মুখ অচেনা, এমনকি শহরের বাতাসটাও কেমন বিরুপ ভাব করছে
আমার সাথে। সব মিলিয়ে বুঝতে পারছি আমি এ শহরের কেউ না। যা হোক স্টেশন থেকে
বেরিয়ে চায়ের দোকানের পাশে দাড়িয়ে আছি। এক ভাই দেখি এদিকেই আসছে। দোকানে
এসে একটা সিগারেট নিয়ে আমার পাশেই দাড়ালো। তার সাথে কিছু সময় পরিচয় মূলক
কথোপকথন হলো। শেষে সে একটা সিগারেট অফার করল। সিগারেট নিয়ে আমি সামনের
দিকে হাটা শুরু করলাম। এক এক পা হাঁটছি আর নিকোটিন দ্বারা অক্সিজেনের কাজ
চালাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি আজ অন্তত " নিলু " তোমার শ্বাস গ্রন্থিতে নিকোটিন পৌছাক।
তুমি ওটা অনুভব করো, আমি তোমার খোঁজে এ শহরে পথিক হয়ে এসেছি। জানি না এ
অপেক্ষার পথ আর কত দীর্ঘ হবে।
রাস্তার একপাশ ধরে হাঁটছি আর গুন গুন করে বৃথা গান গাওয়ার চেষ্টা করছি। যা হোক গান
তো গাচ্ছি তবে শোনার লোক নেই। বেশ কিছু দূর যাবার পর এক গ্রামের কাঁচা পথ ধরে
গ্রামের দিকে হাঁটছি। গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দেখলাম সাত চারা খেলছে। দেখে
ভাল লাগল। বেশ প্রাণোচ্ছল। ইট পাথরে গড়া শহুরে বাচ্চাদের মত না। বয়সের থেকেও
তাদের ব্যবহার, চালচলন,রিতী সম্পূর্ণ আলাদা। দুচোখে ভরা ক্লান্তির ছাপ ।
আমি গিয়ে বাচ্চাদের বললাম আমাকে তোমাদের সাথে খেলতে নিবা।
আসেন আংকেল।
প্রথমে বল হাতে নিয়ে চারা ভেঙে দিলাম দৌড়।এবার বল নিয়ে গায়ে মারার পালা। যে যার
মত এদিক ওদিক দৌড়। আর মাঝে ৭ টা চারা সাজানোর বৃথা প্রচেষ্টা চলছে। এর মাঝে
আমাকে বল মেরে আউট করে দিল।সবাই কি খুশি, মনে হচ্ছে তারা আমাকে আউট করে
জয়ের খুশি উদযাপন করছে । এরপর ওদের নিয়ে পাশে একটা টং এ বসে সবাই চা খেলাম।
সবার সাথে কিছু সময় খোশ গল্প করলাম। সবার মধ্যেই একটা স্বচ্ছতা খেয়াল করলাম। যা
সচরাচর এখন পাওয়া যায় না।সবাইকে সাথে নিয়ে একটা গ্রুপ ছবি তুললাম। যা হোক একটা
সুন্দর সময় কাটল গ্রামের বাচ্চাদের সাথে।
এবার যে যার মতো নিজ গন্তব্যে রওনা করলাম।
তবে যে যাই বলুক একা পথে কোথাও যাত্রা করলে নিঃসঙ্গতা এড়াতে সব থেকে ভাল
পথযাত্রী সিগারেট। টং দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে টানতে টানতে সামনের দিকে যাচ্ছি।
সময়টা শীতের। তবুও কেন জানি না আজ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। আর হালকা বাতাসে শীতটা
বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে।
বেশ খানেকটা দূর যেতে এক নদী। খেয়া ছেড়ে দিছে। এক দৌড়ে নৌকাতে উঠলাম। ২ টাকা
দিতে হবে। এদিকে আমার কাছে টাকা নেই। মাঝিরে বললাম,
মাঝিরে আমি বললাম নৌকা বাই, দেও। টাকা তো নাই।
মাঝি অবাক চোখে তাকিয়ে বৈঠাটা দিয়ে বলল মামা, ডুবাও না যেন।
আমি নৌকা নিয়ে বৈঠাতে সুর তুললাম।
নদী পার হলাম। এবার আস্তে আস্তে গ্রামের দিকে হাঁটছি। বেশ ভালই লাগছে। বেশ কিছু দূর
যাওয়ার পর পেটের মধ্যে ডাকাডাকি শুরু হয়ছে। মনে হচ্ছে ক্ষুধা লাগছে। ভর দুপুর।
আশপাশে দোকান পাট বন্ধ।এদিকে কিছু পেটে না পড়লে আর সামনের দিক হাটতে
পারবো না। ভয়ংকর ক্ষুধা লাগছে।
আর একটু সামনের দিকে যাই, দেখি কোন হোটেল খোলা পাই কি না। বেশ কিছু পথ যাওয়ার
পর এক বাড়িতে অনেক উচ্চ ধ্বনিতে গানের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। শব্দ অনুসরণ করতে গিয়ে
দেখি বেশ বড় সড় এক বাড়ি। প্রথম দেখায় ভাবলাম মোঘল আমলে কোন এক রাজার বাড়ি
হয়তো। বেশ রাজকীয় ভাব আছে। বাড়ির গেটের নামটা ঠিক মতো পড়া যাচ্ছে না। কারণ
গেটের নামের উপর ধুলো জমেছে। হাত দিয়ে ধুলো পরিস্কার করতে বেরিয়ে এলো বাড়ির
নাম। আরাফাত ভিলা । বাড়ির নামের সাথে বাড়ির চেহারার কোন মিল নাই । বাড়ির সদর
গেটে কোন প্রহরীও নাই। বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেখি এক অনুষ্ঠান মুখর পরিবেশ। মনে
হচ্ছে কোন মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। দেখে বেশ ভালোই লাগছে। শেষ কবে কোন
অনুষ্ঠানে গেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। কি করা যায় ঠিক বুঝতে পারছি না। তখনই দেখি
বাড়ির কাজের লোকদের খাওয়ার জন্য ডাকতেছে। ক্ষুধা তো এদিকে আমারও লেগেছে
ভয়ংকর আকারে।তাই আমিও ওদের সাথে গিয়ে পাত পাড়লাম। এক পাত ভাত, গরুর
গোস্তত সাথে ডাল আর এক বড় গামলাতে পেঁয়াজ আর কাঁচা ঝাল। ওদের সাথে বসে খাচ্ছি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করতেই দেখি সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে এক মধ্য বয়স্ক মহিলা। আমার
কাছে এসে বলে,
তোমাকে তো চিনলাম না।
জবাবে আমি বললাম এই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখতে আসছি আর কি।
তিনি উত্তরে আমাকে বললেন , ওহ আচ্ছা। তাহলে উপরে প্যান্ডেল সিটে গিয়ে বস। এখনি
বিয়ে পড়াবে। যাও।
মধ্যবয়স্ক মহিলার মেজাজটা ভাল। অপরিচিত মানুষকে এভাবে সম্বোধন খুব কম মানুষই
করে তাও আবার বিয়ে বাড়িতে।
বাড়ির আশপাশ ঘুরে আমি উপরে গিয়ে বসলাম। বর ততক্ষণে তার পিঁড়িতে বসা। তবে
বৌএর খোঁজ নাই। বসে আছি তো আছি। প্রায় আধ ঘন্টা কনের খোঁজ নেই। আশপাশ
থেকে শুনছিলাম, তার নাকি সাজ এখনো শেষ হয় নি।মেয়েরদের সাজের ব্যপারটা একটু
আলাদা। এ নিয়ে আর স্বল্প বুদ্ধিতে কিছু না বলাটাই শ্রেয়।
এই শুনতে শুনতে কনে হাজির। রক্ত লাল বেনারসি, লাল হাতা ব্লাউজ,কপালে মোটা টিকলি,
হাত ভর্তি সুন্দর নকশা খচিত মেহেদী দেওয়া। দেখে এক মুহুর্তে আমি কেমন থ হয়ে গেলাম।
আমি কি স্বপ্ন দেখছি?? নাকি সত্যি??
পাশের একজনকে বললাম ভাই চিমটি দেন তো। লোকটি অবাক চোখে তাকিয়ে বেশ
জোরেশোরে চিমটি দিল।কৈ কোন কিছুর পরিবর্তন তো হলো না। তারমানে এটা স্বপ্ন না।
আমি তবুও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
নিলু!!
দারুণ ছিলো লেখা
ReplyDelete