প্রতীক্ষা (১) 🔐
আমার শরীরের বহির্ভাগে আমি কোন আঘাত পাইনি । তবে শরীরের যে অংশে আঘাত পেয়েছি , সেটা
কিছুই নয় । সেটা আমি সহ্য করতে পারি । আঘাত লেগেছে মূলত হৃদয়ে ।
অস্পষ্ট দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকাতেই , এক মুহুর্ত যেতে না যেতেই তার চোখের মধ্য হতে একটি তীর বের
হলো আর আমার হৃদয় ভেদ করে গেল ।
এটি ছিল জ্বলন্ত শিখার মত । শিখাটি থেকে লেগে যাওয়া আগুন সর্বক্ষণ বিস্তৃত হচ্ছে এবং তাপ
সহকারে সমস্ত হৃদয় পুড়িয়ে দিচ্ছে । এটি অতি যন্ত্রণাদায়ক ।
ধরা যাক, এটি চুল্লির আগুনের শিখার মত । যার সমস্ত নির্গমন পথ রুদ্ধ । যে কারণে এ আগুন নিয়ন্ত্রণ
অবাধ্য হয়ে উঠেছে । আমি এ আগুনের তাপ আর সহ্য করতে পারছি না । মনে হচ্ছে এ আগুন আমার
সর্বাঙ্গ মোমের মতো গলিয়ে দিচ্ছে । আর আমি যেন শান্ত নিঃশ্বাস থেকে উদ্ভূত শান্ত বাতাসের
অনুভূতি ছাড়াই কেবলমাত্র ছাই হয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছি ।
আজ একলা আমি অচেনা কার প্রতীক্ষায় অনন্তকাল ধরে বসে আছি । তবে তোমার দেখা এখনো
পেলাম না ।একটু বুকে সাহস করে উঠে দাঁড়ালাম । এবার নিজেকে মানুষ বলে মনে হতে লাগলো ।
কিন্তু সে এখনো এলো না ।
সময়ের স্রোত তার নিজ গতিতে ছুটতে থাকে । যাহোক সময়কে এবার একটু অন্যভাবে ভাবতে শুরু
করলাম ।যেমন তুষার যুগ , প্রস্তর যুগ ,মরণ যুগ। যখন যুগের শেষ আমি চলে যাব । হয়তো তার সাথে
এসময়ের মধ্যে দেখা হবে । আসলে দেখা হবে তো?
চারদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে । এমনকি দিগন্তের শেষ কিনারায় কারোর দেখা নেই । এই জনমানবহীন
এলাকায় একা পথ চেয়ে আছি । ধীরে ধীরে অল্প ভয় বাসা বেঁধেছে এ মনে । লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন
এক অবস্থানে একলা আমি । না জানি কখন মরণ যুগের আগমন ঘটে। এত ভয়ের কারণ মরণ যুগের
আগমনে কেউ বেঁচে থাকবে না। আর আমি তোমার দেখা না পেয়ে মৃত্যুর কাছে মাথা নত করতে চাই
না ।
এরই মাঝে ভাবনার অচিরেই পড়ল তুষার যুগ । তাপমাত্রা মনে হচ্ছে হিমাঙ্কের নিচে নেমেছে । এতটাই
ঠাণ্ডা পড়ছে , যে দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাচ্ছে , আর শব্দ শুনে মনে হচ্ছে কে যেন কাঠের জুতা পরে আমার
আশেপাশে হাঁটছে । হঠাৎ করে চারপাশ তুষারের চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করল । আর এর সাথে
জমতে শুরু করল আমার চারপাশ ও আমি । তখন মনে হচ্ছিল চারপাশের জড়বস্তুর মত আমিও
একটি জড়বস্তু মাত্র ।
ইতোমধ্যেই সমস্ত শরীর জমে পাথর হয়ে গেছে । তবুও হৃদয়ের স্পন্দন এখনো তার পথ চেয়ে আছে ।
এভাবেই ভাবনার পিছনে বরফের কারাগারে কেটে গেল তুষার যুগ । তবুও সে এখনো এলোনা ।
কিছু প্রহর যেতে না যেতেই দেখা যাচ্ছে মাথার ওপর অগ্নিকুন্ডের ন্যায় আগুনের গোলা । বরফ গুলো
সেই আগুনের গোলার তাপে গলতে শুরু করলো আর আমার চারপাশ ডুবতে শুরু করল।আমার
চারপাশ যখন ডুবতে শুরু করলো তখন একটা ভাবনা আমাকে যেন তাড়া করছিল । তার সাথে আমার
শেষ দেখাটা হবে তো?
সে ভাবনাকে তোয়াক্কা না করে, সেই ডুবন্ত পানিতে তৈরি করলাম জলঘড়ি । এই জলঘড়ির আর চার
ঘটি জল পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবো । অবশ্য অপেক্ষা তো আর কম করিনি । আর চার ঘটি জল
পরিমাণ সময় অপেক্ষা করলে তেমন কিছু হবে না। এই সময়ের মধ্যে সে ফিরে আসবে ? আর যদি না
আসে তাহলে তো অবশ্যই আমার চলে যাবা ছাড়া উপায় থাকবে না ।
সময় তার নিজ গতিতে অনড় । আর আমার প্রতীক্ষার প্রহর টাও বাড়ছে । প্রতীক্ষার প্রহর বাড়ার সাথে
সাথে ভয়টাও কেমন চেপে বসেছে ।
এর মাঝেই সরতে শুরু করল বরফ গলা জল । ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে বালু চকচকে তলদেশ । তবুও
চোখের সামনে তুমি ধরা দিলে না । বালু চকচকে তলদেশ টা এখন বেশ দৃশ্যমান , আর অনেক জেদিও
হয়ে উঠেছে । এই বালু চকচকে তলদেশে তৈরি করলাম বালুঘড়ি । এবারে বালুঘড়ির উপর দাঁড়িয়ে তার
জন্য প্রহর গুনতে লাগলাম । যে বালুঘড়ির উপর আমি দাঁড়িয়ে সে বালুর তেজ এতটাই যে আমার
শরীরের ঘাম শরীর থেকে পড়ে বালু স্পর্শ করার আগে বাষ্পে পরিণত হচ্ছে । আর এ দিকে গলাটাও
শুকিয়ে কাঠ । চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে । মনে হচ্ছে যে মরণ যুগের আগমনটা এখনি হয়ে যাবে।
হঠাৎ মনে হতে লাগলো দূর থেকে কোন শব্দ ভেসে আসছে । কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছি ।
একটি শব্দই বারবার কানে এসে লাগছে, তুমি অপেক্ষায় থেকো আমি আসব ।
তখন চারপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম । এ কোন শব্দ নয় । এ নিতান্তই আমার মনের ভুল।
সাহারার বুকে এক মরীচিকা মাত্র ।
সময় যাত্রাকালে দেখলাম আমার চারপাশ বেশ বদলে গেছে । সময় গণক নবনির্মিত টাওয়ারের ঘন্টা
বেজে জানান দিল মধ্য রাতের কথা । তবুও যেন প্রহর কাটে না ।
(56 🔐)
২৪/০১/২০১৬

Brilliant writing. Top notch content
ReplyDeletethank you brother. always stay with me
Delete