নিলু শহরে নেই 🔐🔐
দুরাশা খুব ভয়ানক জিনিস । অনেকটা জীবন জুয়ার মতো। একটাই সুযোগ পাওয়া যায় । যদি ভাগ্য
সহায় হয় , তুমি বিজয়ী , আর না পারলে জীবন তোমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেবে না ।
এসেছি এক অচেনা শহরে । শহরের লোকজন , এমনকি শহরের বাতাসটাও বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে ,
আমি এক আগন্তক । সব কিছুই আমাকে ভাবিয়ে তুলছে ।
তৃষ্ণাই গলা শুকিয়ে কাঠ । কিছু দূর আসার পর এক দোকান থেকে জল পান করলাম। দুপুর ৩ টার মতো
বাজে। রাস্তাঘাট ফাঁকা । আর রোদের তেজটাও প্রচুর । কিছু সময় দোকানে বসা যাক । দোকানদার কাকা
দোকানে বসতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
দোকানদার কাকাঃ কি বাবা শহরে নতুন নাকি?
আমি ঃ জি কাকা ।
দোকানদার কাকাঃ তা বাবা কার বাড়ি যাবা ?
আমি ঃ জানি না কাকা।
দোকানদার কাকাঃ এ কেবা কথা বললে বাবা। কার বাড়ি যায়বা জানো না। দেখে তো ভদ্র ঘরের মনে হয়। তা
বাবা রাগ করে পালিয়েছ বুঝি ? নাকি প্রেমের চক্কর ?
আমি ঃ না কাকা ও সব কিছুই না।
দোকানদার কাকাঃ আজব কিসিমের লোক তো বাপু তুমি। তা কেন এসেছ অচেনা শহরে ?
আমি ঃ কাকা মনে হচ্ছে নাছোড়বান্দা । যে করে হোক দোকান ছেড়ে বেরহতে হবে। না হলে কাকার প্রশ্নের
উত্তর দিতে দিতে সময় পার হয়ে যাবে । কাকাকে বললাম , সে অনেক কাহিনী কাকা । আমি এখন উঠি।
দোকান থেকে বেরিয়ে দেখি কিছুটা সামনে মসজিদ । আসরের আজান দিচ্ছে। নামাজ শেষ করে
বেরিয়ে সামনে একটা হোটেল থেকে অল্প ভাজা জাতীয় খাবার খেলাম। হোটেলে বিল দেবার সময়
পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটা পকেটে নেই। হোটেল মালিককে দেখে মনে হচ্ছে বেজায়
ক্ষেপেছে আমার উপর।
হোটেল মালিক ঃ কি ভাই এসব কবে থেকে শুরু করছেন । টাকা নাই বলেন ফ্রী খাওয়াচ্ছি । অযথা
নাটক করার তো কিছু নেই। বিকেলের এই ভাল সময়টা মেজাজ খারাপ করতে কোথা থেকে যে আসে এ
সব লোকজন।
আমিঃ চাচা আমার মানিব্যাগটা খুঁজে পাচ্ছি না। কোথাও হয়তো পড়ে গেছে।
হোটেল মালিক ঃ যান তো ভাই ভাগেন । ধান্দার সময়ে আর মেজাজটা খারাপ করেন না।
আমিঃ আপনার যদি অনেকটা ক্ষতি হয় আমি আপনার দোকানে গায়ে খেঁটে দিচ্ছি।
হোটেল মালিক ঃ ওই আধোয়া বাসন আছে ধুয়ে বিদায় হন ।
আমিঃ সব পরিষ্কার করার পর, চাচা সব পরিষ্কার করে দিয়েছি।
হোটেল মালিক ঃ এবার বিদেয় হন।
সন্ধ্যা নেমে গেছে। আকাশে খানিকটা মেঘ করেছে। একটু টান পায়ে হাঁটছি । মনে মনে শুধু খুঁজছি
কখন নিলুর বাড়ি পৌঁছাব। তবে আমি তো বাড়ি চিনি না। হুট করে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো। পাশের
এক যাত্রী ছাউনীতে আশ্রয় নিলাম। রাতটা থাকার জায়গা নাই। তাই ঠিক করলাম রাতটা এখানেই পার
করি।
লোকজনের চিল্লাপাল্লায় চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে। উঠে দেখি আমার পাশে আমার ব্যাগটা
নেই। বড্ড অবাক হলাম। অবাক হয়েও কোন লাভ নাই । কপাল মন্দ হলে আরও কত কিছুই না
দেখেতে হবে। পাশের চাপ-কল থেকে হাত মুখ ধুয়ে এগোতে শুরু করলাম ।
বেশকিছু সময় হাটার পর শরীর কেমন ঝিমিয়ে আসছে। বুজলাম খুধা লাগছে । কাছে টাকা নাই। কি
করি কিছুই মাথাই আসছে না। দূর থেকে গানের শব্দ শুনা যাচ্ছে । গিয়ে দেখি বিয়ের খানা হচ্ছে।
এদিকে আমি ক্ষুধার্ত । কিছু না ভেবেই খেতে বসে গেলাম। হুট করে শুনি বিয়ের গাড়ি চলে যাচ্ছে ।
কৌতূহলবশত আমি খাওয়া ছেড়ে দেখতে গেলাম। বিয়ের কনেকে দেখছিলাম গাড়িতে তুলছে।
আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। যা দেখছি এটাকি সত্যি নাকি স্বপ্ন? নিজের চোখকে বিশ্বাস
করতেই পারছি না আমি। নিলু!!!!
আমার সমস্থ শরীর নিথর হয়ে যাচ্ছে। চারপাশে এতো কোলাহল , তবুও কানে কিছুই আসছে না।
চারপাশে এতো লোকজন তবুও কাউকে দেখতে পারছি না। শুধু দেখছি তুমি আমার সামনে । তোমাকে
দেখেতে যে কেমন লাগছে , এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার কাছে নেই। আমি শুধু এক
দৃষ্টিতে তোমাকে দেখছি ।
বেশ মানিয়েছে তোমাকে রক্ত রাঙা বেনারসি শাড়িতে ।
তোমার মুখের হাসি দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব খুশি যেন ওই চঞ্চুতে ফুটছে । আমি চোখের পলক
ফেলতে পারছি না।
সর্বপরি কঠিন ও তিক্ত বস্তু অপেক্ষার প্রহর চেয়ে থাকা । আজ আমার এ প্রহরের সমাপ্তি ঘটবে । হঠাৎ করে
গাড়ির মধ্যে তুমি উঠে বসলে ।গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে । আমি ভিড় ঠেলে গাড়ির পিছু নিলাম। তবে গাড়ির
গতির সাথে আমি পেরে উঠছিনা। পায়ের স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেছে । রাস্তা আগ্নেয়গিরির লাভার মত উত্তপ্ত
হয়ে উঠেছে। তবুও তোমাকে পাবার আশাটা এখনও হারায়নি।আমি চিৎকার করে তোমাকে ডাকছি
আর ছুটছি ।
নিলুর গাড়ি মোড় নিল, আমি মোড়ে পৌছাতেই বাঁদিকের রাস্তা থেকে সজোরে একটি গাড়ি এসে আমার
মুখোমুখি।
এই প্রসন্ন শহরে আজ
তোমার প্রশ্রয় পেয়েছিল যে পথিক
সে কি কোনোদিন ভুলতে পারবে তোমায়?
(56)🔐

Heart Touching Moment
ReplyDelete